রুদ্রাক্ষ - এক দুর্লভ বস্তু।


 রুদ্রাক্ষ - এক দুর্লভ বস্তু।
রুদ্রাক্ষ গাছ দেখতে কিছুটা বকুল গাছের মত। গাছের ফল দেখতে গাঢ় নীল রঙের, যে কারণে এর ইংরাজি এক নাম ব্লুবেরি বিডস্‌। এই ফলের বহিরাবরণ সরিয়ে নিলে রুদ্রাক্ষ বেরিয়ে পড়ে যা হতে পারে বহুমুখী। এটা ধর্মীয় 'মালা' তৈরির কাজে লাগে।। পৃথিবীর মোট উৎপাদনের ২৫ ভাগ নেপালে পাওয়া যায়। এছাড়া প্রায় ৬৫ ভাগ পাওয়া যায় ইন্দোনেশিয়ার জাভা, সুমাত্রা এবং বোর্নিও প্রভৃতি দ্বীপে। বাকি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। প্রাচীন কালে রুদ্রাক্ষের মালা হিন্দু সম্প্রদায়, বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বাউলদেরও মাঝে ব্যাপক ব্যবহার করতে দেখা গেছে তখন সহজলভ্য ছিল কিন্ত বর্তমান গাছের সংখ্যা কমে যাওয়াতে দুর্লভ হয়ে পড়েছে রুদ্রাক্ষ। বর্তমানে ইহা খুবই দুর্লভ বস্তু। নেপালে এক পিচ মোটামুটি মানের রুদ্রাক্ষের মূল্য ২০ হতে ৫০ মার্কিন ডলা

রুদ্রাক্ষের ক্ষেত্রে এর মুখিতার উপর নির্ভর করে এর মূল্য। বীজকোষের বিভাজন রেখার গভীর দাগ থেকেই এর মুখ-সংখ্যা নিরূপন করা যায়। পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষই দেখতে পাওয়া যায় বেশি। তবে ১ থেকে শুরু করে ৩৮ মুখী পর্যন্ত রুদ্রাক্ষের সন্ধানও পাওয়া যায়। সহজলভ্য নয় বলে ১৪ থেকে ২১ মুখী রুদ্রাক্ষের মূল্যও বেশী। গৌরীশঙ্কর, ত্রিযুতি রুদ্রাক্ষ - জগতে পরিচিত হলেও সাধারণ্যের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। গৌরীশঙ্কর রুদ্রাক্ষ দেখতে দুটি রুদ্রাক্ষ-বীজ একসঙ্গে জোড়া দেয়া মনে হয়, যাকে শিব ও পার্বতীর প্রতীক বলে মনে করা হয়। বৌদ্ধ অনুসারীদের দেখা যায় কলাবতীর শক্ত বীজের সঙ্গে রুদ্রাক্ষের দানা মিশিয়ে সঙ্কর মালা তৈরি করতে। সবচেয়ে দুর্লভ সুশ্রী এবং গোলাকার একমুখী রুদ্রাক্ষ যা আজকাল অতিশয় দুর্লভ। ভারতের টাটা কোম্পানী ৭০ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি একমুখী রুদ্রাক্ষ বংশ পরম্পরায় রক্ষা করে আসছে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যায় এর রুদ্রাক্ষের ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক স্বভাব। বেনারস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির ডক্টর সুভাস রায় গবেষণায় রুদ্রাক্ষের অনেক কার্যকারিতার উম্মোচন করে। মানব দেহের রক্ত সংবহনতন্ত্রে রুদ্রাক্ষের অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে।রুদ্রাক্ষের চৌম্বকীয় আবেশের জন্যে দেহের কিছু ধমনী ও শিরা স্ফীত হয়ে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে। জীবিকা ও জীবোন্নতির কারণে আমরা এ যুগে অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিয়ে চলি। চাপের কারণে হৃদযন্ত্রের স্পন্দনের মাত্রা বেড়ে যায় যাতে দেহে অতিরিক্ত জীববিদ্যুৎ তৈরি হতে থাকে। রুদ্রাক্ষ এই অতিরিক্ত বিদ্যুৎকে ধারণ করে স্থিতিশীল করতে পারে। অতএব রক্ত সংবহনে এবং হৃদযন্ত্রের স্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রুদ্রাক্ষের ভূমিকা অনেক।

রুদ্রাক্ষের উপকারিতা উপলব্ধি করার পর থেকে উত্তরোত্তর এর চাহিদা বেড়েছে কিন্তু সেই তুলনায় সরবরাহ নেই। নেপালে রুদ্রাক্ষের চাষ হয় কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। রুদ্রাক্ষের সকল বীজকোষে বীজ থাকে না, প্রায় ২০% থাকে শূন্য। শক্ত বীজ থেকে অঙ্কুরোদ্গমের জন্যে সময় লাগে ৬ মাস। নেপালের মত উপযুক্ত আবহাওয়া না পেলে এই গাছ তেমন ফলবতী হতে পারে না। উভলিংগী ফুল হওয়া সত্ত্বেও এসব গাছে ফুল ধরতে ৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত লেগে যায়। একটি গাছে ফল ধরে দুয়েক হাজার যার প্রায় অর্ধেক ঝরে পড়ে অপরিপক্ক অবস্থায়। গাছের ওপরের অবশিষ্ট ফল বিশেষ কৌশলে সংগ্রহ করতে হয় তান্ত্রিক-দ্রব্য সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে।

চোখ ওঠা,হাপানিতে, ক্ষয় রোগে, মৃগী রোগে এ গাছের উপকারিতা আছে। রুদ্রাক্ষের ফল মৃগীরোগীদের জন্যে উৎকৃষ্ট। প্রাচীন হিমালয়ের সাধুরা তৃষ্ণা নিবারনের জন্যে একে ব্যবহার করেছেন। স্বাদে টকজাতীয় বলে নেপালের মানুষ তৈরি করে পিকলস্‌ জাতীয় মুখরোচক খাবার। প্রাচীনকালে বসন্ত-গুটির প্রলেপে এবং যক্ষা ও শ্লেষ্মার জন্য ব্যবহার হতো।



Comments

Popular posts from this blog

" আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি " -

ধর্মের নামে ভন্ডামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে