রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এবং সহজ ভাষায় অল্প কিছু কথা -

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেই বললেই চলে। এটা নিয়ে যে ভীতির কথা বলা হয় সেটা বিতর্কিত, অনেকেই বিতর্ক করতে হয় তাই বিতর্ক করছে। লক্ষ্য করুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্যান্সারসহ জটিল বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় নিউক্লিয়ার পাওয়ার ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বিশ্বে পারমানবিক শক্তি ব্যবহারের পদ্ধতি অনেক উন্নত এবং নিরাপদ। না বুঝে অযথা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটা হবে বোকামি পূর্ণ। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং গাইডলাইন অনুযায়ী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে।
মানব সম্পদ উন্নয়ন, উৎপাদন কেন্দ্রের (রিঅ্যাক্টর) নিরাপত্তা, পরিবেশের ভারসাম্য সংরক্ষণ সহ সর্ব প্রকার বিষয়াদির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব বিবেচনায় রেখেই রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে থাকবে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে শূন্যের কোঠার নিচে। এ প্রকল্পে থ্রি প্লাস রিঅ্যাক্টর বসবে। যেটি বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ ও আধুনিক প্রযুক্তি। যা এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র রাশিয়ার একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়েছে। এবং বাংলাদেশের রূপপুরেই এর হবে দ্বিতীয় ব্যবহার। নির্মিতব্য ভিভিইআর-১২০০ টাইপ রিঅ্যাক্টরে রয়েছে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা:
(১) রিঅ্যাক্টরটি মনুষ্য সৃষ্ট যেকোনো বিপর্যয় এবং প্রাকৃতিকভাবে ঘটতে পারে এমন যেকোনো প্রকার দুর্ঘটনা যেমন- শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি মোকাবেলায় সক্ষম।
(২) ফুকুশিমা দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে বাহ্যিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বিহীন অবস্থায় ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত প্ল্যান্ট নিরাপদে শাট ডাউন রাখার ক্ষমতা ডিজাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
(৩) দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনার জন্য পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নকশায় নানা রকম অ্যাক্টিভ ও প্যাসিভ শীতলীকরণ ও চাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সন্নিবেশ করা হয়েছে।
(৪) যেকোন দুর্ঘটনার পরিস্থিতিতে পারমাণবিক চুল্লির মূল অংশের (কোর) বিগলন প্রতিরোধ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়েও কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে।
(৫) সর্বশেষ পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য রয়েছে কোর ক্যাচার, যা মারাত্মক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যদি কোর গলেও যায়, সেক্ষেত্রেও তেজস্ক্রিয় পদার্থ পরিবেশে ছড়ানো থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিরত রাখবে।
রাশিয়ার বিশেষজ্ঞ দল ও বাংলাদেশি কর্মী মিলে প্রায় ১ হাজারের বেশি কর্মী দিন-রাত কাজ করছেন। ২০২০ সালের মধ্যেই রিঅ্যাক্টর ভেসেলসহ সব যন্ত্রপাতিই রাশিয়া থেকে চলে আসবে। তারপর এখানে অ্যাসেম্বলিং করা হবে। এবং ৬৮ মাসের মধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। দেশের সর্বপ্রথম ও বিশ্বে ৩২ তম পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বিদ্যুতের ঘাটতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।






৩০ নভেম্বর ২০১৭ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের ৩২তম রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের মূল পর্বের প্রথম কংক্রিট ঢালাই কাজের উদ্বোধন করেন । 





ছাড়া নানা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তো রয়েছেই। জানার আছে অনেক কিছু - পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কি? Pressurized Water Reactor (PWR), Boiling Water Reactor (BWR), মেল্টডাউন, তেজস্ক্রিয়তা, আইসোটেপ, পরমাণু, ইলেকট্টন, প্রোটন, নিউট্রন, আইসোটপের ভৌত রাসায়নিক ধর্ম, ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, প্লুটুনিয়াম, ফিশন, তাপশক্তি বিকিরণ, পরমাণু 
ইন রিয়েকশন, নিয়ন্ত্রক রড/পাইপ, টারবাইন, কনডেনসর/কুলিং টাওয়ার, তেজস্ক্রিয় পার্টিকেল, ব্যক আপ জেনারেটর, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন, টারবাইন ইত্যাদি। এইসব বিষয়ে আমরা কতটুকু জ্ঞান রাখি তাই। আর প্রকল্পের সাথে জড়িত আছেন একদল দেশি বিদেশী চৌকস বিশেষজ্ঞ দল। তাঁরা আমাদের চাইতে অনেক বেশী জানেন বুঝেন - তাই এতো চিন্তাবিদ না হয়ে আমরা যারা যার অবস্থান থেকে যে, যে পেশায় নিয়োজিত আছি তা সঠিক ভাবে পালন করি - দেশকে এগিয়ে নেই। 
============লক্ষণীয় এক পাউন্ড ইউরোনিয়াম দিয়ে যে পরিমাণ বিদুৎ উৎপাদন করা সম্ভব তা কয়লা দিয়ে উৎপাদন করতে গেলে ৩ মিলিয়ন পাউন্ড কয়লার প্রয়োজন। পারমাণবিক রিয়েক্টরের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও কম।
=========
এতো সল্প পরিসরে পারমানবিক বিদ্যুৎের বিশালতা ব্যাপ্তি - বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যা করা সম্ভব না।
===
তথ্য সূত্র - International Atomic Energy Agency (IAEA), Nuclear Power Plant Company Bangladesh (NPCBL), Construction of Rooppur Nuclear Power Plant Project, জোবাইর, banglanews24.com, .jugantor.com, most.gov.bd, rooppurnpp.gov.bd, banglatribune.com

Comments

Popular posts from this blog

" আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি " -

রুদ্রাক্ষ - এক দুর্লভ বস্তু।

ধর্মের নামে ভন্ডামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে