এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী - একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আর নেই
(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) 
একজন মহিউদ্দিন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা -
স্কুল জীবনে জড়িয়ে পরে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সিটি কলেজেই তার বিপ্লবী রাজনৈতীক জীবনের হাতেখরি। রাজনৈতিক জীবনের শুরতেই সান্নিধ্যে আসেন জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরির। বংগবন্ধুর ডাকে আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিতে গিয়ে পাকিস্তান বাহিনির কাছে গ্রেফতার হন অসংখ্যবার।
১৯৭১'এ সশস্ত্র প্রশিক্ষন শেষে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখসমরে অংশ নেন। তিনি ছিলেন ভারত-বাংলা যৌথবাহিনীর মাউন্টেন ডিভিশনের অধিনে। দেশ স্বাধিনের পর বঙ্গ বন্ধুর নির্দেশে ঝাপিয়ে পরেন দেশ গড়ার নতুন সংগ্রামে। বঙ্গ বন্ধুর খুবই কাছের আর আদরের ছাত্রনেতা ছিলেন মহিউদ্দীন।
বঙ্গ বন্ধু স্বপরিবারে নিহত হবার পর - ভারতে প্রতিবিপ্লবীদের সাথে যোগ দেন। লক্ষ্য সামরিক জান্তা, খুনি মোশতাক সরকারকে পরাস্ত করা। জিয়া হাতে নিষ্পেশন, নির্যাতন, আর একের পর এক কারাভোগ। মুক্তিযোদ্ধাদের উপর জিয়ার দমন, বঙ্গ বন্ধুর হত্যাকান্ডে প্রতিবাদে তিনি চালায় একের পর প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ।
স্বৈরাচারি সামরিক সরকার এরশাদের শাসনামলে চট্টগ্রামে এরশাদকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। চক্ষুসুল হন স্বৈরাচারি সামরিক এরশাদ সরকারের। আবারও রাজনৈতিক বন্দি। ততদিনে চট্টগ্রামের আমজনতার নয়নমনি হয়ে উঠেন মহিউদ্দীন চৌধুরি।
নব্বইয়ের গনআন্দোলনে এরশাদের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছিলেন রাজপথে সিপাহীসালারের ভূমিকায়। তিনি ৯৬ সালের খালেদা জিয়ার প্রহসনের নির্চাচন ও গনআন্দোলনে অগ্রণী ভুমিকা রাখেন।
সর্বশেষ নির্যাতিত হন ওয়ান ইলেভেনের শাসনামলে। ষাটোর্ধ বয়সে কারাগারে ছিলেন দীর্ঘ দুই বছর। কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যায় তার আদরের মেয়ে ফওজিয়া সুলতানা টুম্পা। টুম্পার মৃত্যু অবধারিত জেনেও দেখতে দেয়নি ওয়ান ইলেভেন সরকার নামক সামরিক জান্তা। শতচেস্টা আর মানসিক নির্যাতন করেও তাকে টলাতে পারেনাই ওয়ান ইলেভেন সরকার।
========
আন্দোলন - সংগ্রামের অপর নাম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক, সামাজিক জীবন রয়েছে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন, কীর্তি-কর্ম সব মিলিয়ে অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারি। মহিউদ্দিন চৌধুরী তাঁর উদারতা অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছেন। নৈতিক অবস্থা থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি। তিনি জণকল্যাণকে হৃদয়ে ধারণ করেই রাজনীতি করেছেন। মানসিক দৃঢ়তাই তাঁর প্রধান গুণ। তিনি একটি আলোকিত সমাজের জন্য যুদ্ধ করেছেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে তার অবদান যেমন চট্টগ্রামবাী যুগ-যুগ ধরে মনে রাখবে, তেমনি নিগৃহীত সম্প্রদায় হরিজনদের সেবক নামে আখ্যা দেওয়া তাঁর মহত্বের প্রমাণ। তার পাহাড়সম সংগ্রামী ব্যক্তিত্বের কাছে অন্যায়কারীরা বারবার তারা কাছে পরাজিত। তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।
==========
জননেতা চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী (জন্ম: ১ ডিসেম্বর, ১৯৪৪,চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামে।মৃত্যু ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭)। পিতার মরহুম হোসেন আহমদ চৌধুরি আর মাতা মরহুম বেদৌরা বেগম। আট ভাইবোনের মাঝে তিনি মেঝ। পিতা চাকুরী করতেন আসাম বেঙ্গল রেলওয়েতে। পিতার চাকরির সুবাদে মহিউদ্দিন পরাশুনা করেছেন মাইজদি জেলা স্কুল, কাজেম আলি ইংলিশ হাই, আর প্রবর্তক সংঘে। ভর্তি হয়ে ছিলেন ডিপ্লোমা ইন্জিনিয়ারিং এর কোর্সে। সেখানের পাঠ না চুকিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রামের অন্যতম বিদ্যাপিঠ চট্টগ্রাম কলেজে। বছর না ঘুরতেই কমার্স কলেজ, আর শেষমেষ সিটি কলেজ। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই সর্ব শ্রদ্ধাভাজন প্রবীণ রাজনৈতিক নেতা ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালের মেয়র নির্বাচনে তিনি ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন মন্ত্রীকে পরাজিত করে তৃতীয়বারের মতো চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন।
=============
"আমি আত্ম প্রচারে বিশ্বাস করি না। কোনো সেবা মূলক কাজ করার পর তা আমার মনে থাকে না। সুনাম পাওয়ার জন্য আমি কোন কাজ করি না। আমার লক্ষ্য হলো চট্টগ্রামের ভৌগোলিক সম্পদকে কাজে লাগানো। আমরা আরো সমৃদ্ধ জীবন চাই। এ জন্যে প্রয়োজন শিক্ষার আলো। প্রতিটি ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিলেই আমরা মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবো। মানুষের সেবায় আমি চিরদিন কাজ করে যাবো। ১৭ বছর মেয়র থাকাকালে আমি এক টাকাও কর বাড়াইনি। আমরা চট্টগ্রামকে অবশ্যই উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যাবো"। (এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী)।
=======
বিনম্র শ্রদ্ধা স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। ভালো থাকবেন না ফেরার দেশে। বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগ তথা দেশ হারালো দুঃসময়ের একজন অভিভাবক।   

Comments

Popular posts from this blog

" আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি " -

রুদ্রাক্ষ - এক দুর্লভ বস্তু।

ধর্মের নামে ভন্ডামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে