সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনকে চিনতে গেলে যেতে হবে শেকড়ের কাছে - মাটির কাছে - সাধারণ মানুষের কাছে।

বিনম্র শ্রদ্ধা ভালোবাসা-

৩১ ডিসেম্বর/২০১৭ সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন এর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী। 
----------
সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি মৃত্যু শঙ্কায় শঙ্কিত ছিলেন। বাংলাদেশের সব চাইতে জামাত প্রভাবিত এলাকার সাংসদ ছিলেন তিনি। এই সেই লিটন যিনি সুন্দরগঞ্জের মাটিতে রাজাকার শিরোমনি গোলাম আজমের রাজাকার সভা (জনসভা) বানচাল করেছিলেন। বাংলাদেশের ক'জনার এরকম সাহস আছে - রাজাকার শিরোমনির মিটিং পণ্ড করে দেবার। রাজাকার সাইদির রায়ের পর তার এলাকায় যে নারকীয় তান্ডব চালিয়েছিল - জামাত শিবির তা মনে করলে আজো এলাকা বাসি শিউরে উঠে। সেদিন পুলিশ হত্যা কাণ্ড সহ আওয়ামী লীগ অফিস, তার ব্যক্তিগত অফিস, রেল ষ্টেশন সহ নানা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে ছিল এই রাজাকাররা। এরপর তিনি কঠোর ভাবে এসব প্রতিহত করে ছিলেন। তিনি ছিলেন জামাত শিবির - দেশ বিরোধীর জন্য আতঙ্কের নাম। তিনি সব সময় মৃত্যুকে সাথে নিয়ে এলাকায় রাজনীতি করেছেন। তার রাজনীতির রাস্তা ছিল কণ্টকময়। তিনি বহুবার হামলার শিকার হয়ে ছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হল না ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬, সন্ধ্যার সময় নিজ বাড়ীতে নিরস্ত্র অসহায় অবস্থায় নির্মম ভাবে নিহত হলেন সন্ত্রাসিদের গুলিতে।     
------------- 
শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করেছিলেন এই সাংসদ এই সংবাদ পরিবেশনা নিয়ে - সেদিন তার বিরুদ্ধে উঠে পরে লেগে ছিল সবাই। গরম খবর ছিল সেটি। কারণ তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংসদ। এই খবর ছিল সহানুভূতি পূর্ণ। পাবলিক সংবাদটি খেয়ে ছিল ভালোভাবে। সেদিন তিনি যে দুর্বৃত্তদের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন - তার সে দাবি সবাই অগ্রায্য করেছিলো। তিনি বারবার বলেছিলেন তার উপরে হওয়া হামলার কথা। সে সময় সবাই মিলে তাকে জাতীয় ভিলেনে পরিণত করেছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য - খবরের ভিতরের খবর অনুসন্ধান করবার প্রয়োজন কেউ মনে করে নাই। এমন কি আওয়ামী লীগের অনেক নেতারাও সেদিন দুরে সরে গিয়েছিল। মৃত্যুর পূর্বে বড্ড একা নিঃসঙ্গ হয়ে গিয়েছিলেন এই অকুতভয় নেতা। দলীয় নেতা কর্মীদের আচরণে বড্ড মর্মাহত হয়ে ছিলেন। এই মহান নেতা ক্ষোভে, দুঃখে নিজেকে গুঁটিয়ে নিয়ে ছিলেন জীবনের শেষ সময়টাতে। এক জন লিটনকে মূল্যায়ন করতে আমরা অপারগ হয়ে ছিলাম। তাকে অবমূল্যায়ন করেছিলাম। এই দেশ প্রেমিককে করেছিলাম লাঞ্ছনা অপমান। তার প্রাপ্য সম্মান আমরা দিতে পারিনি।          
-----------
একজন মনজুরুল ইসলাম লিটন উপজেলায় ঘুষ বাণিজ্য, রিলিফ চুরি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন প্রতিবাদী কন্ঠ। যার জন্য তিনি ছিলেন দুর্নীতিবাজ, মন্দ লোকদের চক্ষুশূল। যারা এইসব অনিয়ম করতে পারতো না তারা লিটনের নামে - নানা সময় মিথ্যা সংবাদ প্রচারে লিপ্ত থাকতো। শিশু সৌরভকে গুলির ঘটনার পর তার ব্যক্তিগত লাইসেন্স প্রাপ্ত অস্ত্র জমা নিয়ে নেয়া হয়। দুঃখজনক সত্য - এই দুর্ভাগা সাংসদ - নানা সময় তার নিরাপত্তা নিয়ে ছিলেন চিন্তিত। কিন্তু কেউ তার কথার কর্ণপাত করেন নাই। প্রশাসন তার নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। এবং সাংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনকে নিজ বাড়ীতে অসহায় নিরস্ত্র অবস্থায় জীবন দিয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে উনি সত্যই মৃত্যু শঙ্কায় শঙ্কিত ছিলেন।       
-------
তিনি নিজ এলাকায় ১০০ শত মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন পরিকল্পনা করে ছিলেন। তিস্তা ব্রিজ ছিল তার স্বপ্ন। বন্যা, টর্নেডো দুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসতেন। কোন সরকারী সাহায্যের আশায় সময় নষ্ট করতেন না তিনি। নিজ উদ্যাগে এ সব সাহায্যের ব্যবস্থা করতেন। দুর্গম চর এলাকাগুলোতে ছিল তার উন্নয়নের ছোঁয়া। ছুটে বেড়িয়েছেন সুন্দরগঞ্জের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। তিনি ছিলেন সু-বক্তা। বিদ্যানুরাগী। ক্রীড়া অনুরাগী। ছিলেন সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। ছিলেন একজন ভালো কৃষক। কৃষকদের কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠিত করেন অত্যাধুনিক হিমাগার।

তিনি ঘরে বসে থাকা আয়েশি নেতা ছিলেন না - ছিলেন রাজপথের লড়াকু সৈনিক। ছিলেন মিটিং মিছিলে।তিনি ছিলেন সাধারণ জনগণের হৃদয়ের নেতা। দুনীতিবাজ লোভীদের কাছে ছিল আতঙ্কের নাম। একজন মনজুরুল ইসলাম লিটনকে চিনতে গেলে যেতে হবে শেকড়ের কাছে - মাটির কাছে - সাধারণ মানুষের কাছে।  
------
তার কাছে সবাই যেতে পারতেন যে কোন অভাব অভিযোগ নিয়ে। কোন বাঁধা নিষেধ ছিল না। তার সদর দরজা সব সময় উন্মুক্ত ছিল সবার জন্য। যার ফলাফল তার নির্মম মৃত্যু। এ জন্য সহজে অজ্ঞাতনামা যুবকরা বাড়ীর বৈঠকখানায় প্রবেশ করে গুলি করে পালিয়ে যেতে পেরেছিল। তিনি ছিলেন একজন খাঁটি মুজিব সৈনিক। ছিলেন এলাকা তথা দেশের গর্ব।
--------
শুধু এলাকার জন্য নয় এইটা আওয়ামী লীগর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। জামাত সহ অন্যান্য অপশক্তিরা উল্লাস প্রকাশ করছে -আওয়ামী লীগের একটা শক্ত উকেট পতনের জন্য। একজন লিটন যিনি কিনা সুন্দরগঞ্জকে শূন্য অবস্থান হতে স্বাধীনতার পক্ষের দল আওয়ামী লীগ কে চূড়ান্ত অবস্থায় নিয়ে গিয়ে ছিলেন। একজন সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের কোন বিকল্প নাই জামাত প্রভাবিত এই এলাকায়। এরকম এক জন দেশ প্রেমিক জন্মাবে না সহজে। তার শূন্যতা আজ অনুধাবন করতে পারে সাধারণ জনগণ। 
-------------
শেষ কথা - 

লিটন হত্যাকাণ্ডের অপরাধে - গত ফ্রেবুয়ারি/১৭ তে  জাতীয় পাটির সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অবঃ) ডাঃ কাদের খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাদেরের অর্থ, পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় সংসদ লিটনকে হত্যা করা হয়। হত্যাকান্ডে অংশ নেয় কাদের খানের কর্মী শাহীন, মেহেদী, হান্নান ও রানা। প্রায় এক বছর ধরে এরা লিটনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হত্যায় অংশ গ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণও দেয় কাদের খান। গ্রেপ্তারকৃত  কাদের খান, শাহীন, মেহেদী ও হান্নান গাইবান্ধার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। 

সরকারের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। আমরা হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার কামনা করছি।
-------
জয় বাংলা।। জয় বঙ্গবন্ধু ।।
==========

youtube

সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটন ভাইয়ের স্মরণে এথেন্স শাওনের লেখা পুঁথি।


সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন ছিলেন সাধারণ জনগণের হৃদয়ের নেতা 


Comments

Popular posts from this blog

" আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি " -

রুদ্রাক্ষ - এক দুর্লভ বস্তু।

ধর্মের নামে ভন্ডামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে